Labels

DOWNLOAD (4) Games (1) Hacking tips (8) info (1) mobile tips (2) news (17) pc tips (1) tips (2)

Sunday, November 20, 2011

মহাকাশের বিস্ময়কর বস্তু ‘কোয়াসার’

মহাকাশের বিস্ময়কর বস্তুসমূহের মধ্যে ‘কোয়াসার’ অন্যতম।Quasi Steller Radio Sources-এর সংক্ষিপ্ত রূপ Quarsar।শ-খানেক গ্যালাক্সি-নির্গত আলোকে একত্র করলে যে তীব্র আলো পাওয়া যাবে,একটি কোয়াসার মহাকাশের অতি দূরতম অঞ্চল থেকে তার চেয়েও বেশি আলো ছড়ায়। জ্যোতির্বিদদের ধারণা,মহাবিশ্বে একসময় প্রায় দশ লাখ কোয়াসার ছিল।মহাবিশ্বের বিস্তারণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অধিকাংশই অনেক দূরে চলে গেছে।কোয়াসার কী? কোয়াসার সাধারণ নক্ষত্র নয়। প্রথম দিকে আবিষ্কৃত কোয়াসারগুলোর মধ্যে রেডিও-তরঙ্গ নির্গমনের বিষয়টি লক্ষ করা গেলেও পরবর্তী সময়ে এমন কিছু কোয়াসার পাওয়া যায়,যাদের রেডিও-তরঙ্গ সক্রিয় নয়। তাই সাধারণভাবে Radioএবং Sources শব্দ দুটির পরিবর্তে Objects শব্দটি ব্যবহার করে এর নাম দেওয়া হয় Quasi Steller Objects;সংক্ষেপে QSO। কোয়াসার সম্পর্কে বেশ কয়েকটি মতবাদ প্রচলিত আছে।সেগুলোর মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য:
কোয়াসার ১০ লক্ষাধিক সৌরভরের এক বিচিত্র নক্ষত্র। এর কেন্দ্রের কণাসমূহের মধ্যে সংঘটিত তাপ-উৎপাদী বিক্রিয়া—ফিশন,ফিউশন,মহাকর্ষীয় পতন ইত্যাদিই এর আলোর উৎস।কোনো কোনো অদৃশ্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত অতিভারী কৃষ্ণবিবর পার্শ্ববর্তী তারা থেকে প্রচুর পরিমাণ পদার্থকে ধূলি ও গ্যাসে রূপান্তর করে আত্মসাতের মাধ্যমে পরিণত হয় কোয়াসারে।কৃষ্ণবিবরে নিপতিত পদার্থের ধ্বংসজনিত শক্তিই কোয়াসারের আলোর উৎস।প্রথম মতবাদ অনুসারে কোয়াসারের ক্ষুদ্র আয়তন এবং বিপুল আলো নির্গমনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়,কিন্তু অতিভরের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।এ কারণে মতবাদটি তেমন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই প্রয়োজন পড়ে আরও সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য একটি মতবাদের। অতিভরের ব্যাখ্যাসহ প্রায় সর্বজনগ্রাহ্য দ্বিতীয় মতবাদটি দেন লিনডেন বেল। ১৯৭৫ সালে জ্যোতির্বিদ হিল মতবাদটিকে আরও বিস্তৃত করে বলেন,কৃষ্ণবিবরটি প্রকৃতপক্ষে কয়েক কোটি সৌরভরবিশিষ্ট তারার এক ঘন সন্নিবেশের কেন্দ্রে অবস্থিত। এর নিকট দিয়ে পার্শ্ববর্তী তারাদের যাতায়াত আছে। যখন কোনো তারা কৃষ্ণবিবরটির কাছ দিয়ে যায়, তখন সেটির নিকট-প্রান্তের আকর্ষণ দূরপ্রান্তের আকর্ষণের চেয়ে অনেক বেশি হয়।এতে তারাটি ভেঙেচুরে ঘূর্ণমান ধূলি ও গ্যাসীয় মেঘে পরিণত হয়ে ঘুরতে ঘুরতে একটি অ্যাক্রেশন ডিস্ক গঠন করে।এই ডিস্ক থেকে প্রচুর গ্যাস ও ধূলিকণা কৃষ্ণবিবরের পৃষ্ঠে পতিত হওয়ার পূর্বে যতক্ষণ ঘটনা-দিগন্তের (কৃষ্ণবিবরের আকর্ষণ এলাকার যে সীমানা অতিক্রম করলে আর ফিরে আসা সম্ভব নয়) বাইরে অবস্থান করে ততক্ষণ বিপুল আলো নিঃসরণ করে। আবিষ্কার ১৯৬৩ সালে প্রথম কোয়াসার আবিষ্কৃত হয়। দুই বিলিয়ন আলোকবর্ষ (আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে) দূরে অবস্থিত প্রথম আবিষ্কৃত কোয়াসারটির নাম দেওয়া হয়েছিল 3C—48(3rd Cambridge Catalogue—48)।এই কোয়াসারটি উজ্জ্বলতা সূর্যের উজ্জ্বলতার চেয়ে ১০ হাজার কোটি গুণ বেশি। কিন্তু এর ব্যাস মাত্র ১০০ কোটি কিলোমিটার, যা সৌরজগতের ব্যাসের কাছাকাছি।প্রায় একই সময় সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিরিল হাজার্ড আরও একটি কোয়াসার প্রাপ্তির ঘোষণা দেন, যার নাম দেওয়া হয় 3C-273। এরপর আরও কয়েকটি কোয়াসার আবিষ্কৃত হয়। কৃষ্ণবিবর থেকে কোয়াসার!দেখা গেছে, দুটি প্যাঁচানো আকৃতির গ্যালাক্সির সংঘর্ষে একটি বিশাল উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সির সৃষ্টি হয়। সেই সংঘাতের সুযোগেও জন্ম নিতে পারে একটি কোয়াসার। যে দুটি গ্যালাক্সির মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তাদের যেটির ভর বেশি সেটির কেন্দ্রস্থ অতিভারী কৃষ্ণবিবর শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এবং অপর গ্যালাক্সির সব নক্ষত্রও গ্যাসকে গ্রাস করতে থাকে। এ সময় অঞ্চল থেকে বিপুল আলো নিঃসরিত হয়।কৃষ্ণবিবরসহ পুরো চুপসে যাওয়া গ্যালাক্সিটিই তখন পরিণত হয় একটি কোয়াসারে। সম্প্রতি হাবল স্পেস-টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে PG-1012+008 নামের একটি কোয়াসারের সন্ধান পেয়েছে, যার উদ্ভব হয়েছে দুটি গ্যালাক্সির সংঘর্ষের ফলে।বর্তমান সময়ের অনেক জ্যোতির্বিদই মনে করেন,মহাবিশ্বের অধিকাংশ গ্যালাক্সিই একদা কোয়াসার ছিল।সময়ের বিবর্তনে ওগুলো বর্তমান অবস্থাপ্রাপ্ত হয়েছে।কোয়াসারের জীবন অনন্ত নয়, অন্য জ্যোতিষ্কদের মতো এরাও ক্রমাগত শেষ পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। কোয়াসারে রূপান্তরিত কৃষ্ণবিবরটি অতি-সক্রিয় হয়ে উঠলে তার শক্তি নির্গমনের তোড়ে চারপাশের কিছু কিছু বস্তু দূরে ছিটকে যেতে থাকে। এভাবে কৃষ্ণবিবরের ভর কমতে থাকে। এ সময় থেকেই ওটির তেজ ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং একটি সময় আসে যখন কৃষ্ণবিবরের তেজ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে।ধরে নেওয়া হয় তখন কোয়াসারটির আয়ু শেষ।একটি কোয়াসার গড়ে প্রায় দশ লাখ বছর সক্রিয় থাকে।বর্তমানে আমরা যেসব কোয়াসার দেখছি,তাদের চেহারা মোটেই আজকের নয়; বহু কোটি বছর আগে ওগুলো থেকে যে আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে পড়েছিল, তা-ই মহাকাশের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে আমাদের চোখে পড়ছে।
সূত্র :prothom-alo

No comments:

Post a Comment